রাত তখন প্রায় (০২:০০) দুইটা। শহরের বেশিরভাগ এলাকা ঘুমের আচ্ছাদনে ঢেকে গেছে। তবুও, কিছু মানুষ তখনও জেগে আছে—কেউ কাজ করছে, কেউ নিজের দায়িত্ব পালন করছে। বরগুনা জেলার বরগুনা সদর থানার ০২ নং গৌরিচন্না ইউপির পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকা তখন জনশূন্য। কিন্তু নির্জন রাস্তাগুলোতে পুলিশের একটি পিকআপ নিয়ে ধীরে ধীরে টহল দিচ্ছলাম। টহল দলের ইনচার্জ হিসেবে আমি টহল পার্টি নিয়ে শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যস্ত। রুটিন টহলের অংশ হিসেবে আমি মাছ বাজার ব্রিজ পার হয়ে পুরান বাস স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় থেমে গাড়ি চেক করছিলাম। হঠাৎ পুরনো বাস স্ট্যান্ড এলাকার একফাঁকা গলির মোড় থেকে আমরা এক নারীর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই।
**ঘটনার সূত্রপাত**
কান্নার আওয়াজ পেয়ে আমি ড্রাইভারকে দ্রুত গাড়ি থামাতে বলি। পুরো দল নেমে সেই গলির দিকে এগিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, এক তরুণী একা দাঁড়িয়ে কাঁপছে। বয়স বেশি হলে ২৫-২৬ হবে। তার পরনে সাধারণ শাড়ি, চেহারায় আতঙ্ক স্পষ্ট। আমি শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি ঠিক আছেন তো? কী হয়েছে? মেয়েটি কাঁপা কাঁপা গলায় জানাল, সে ঢাকা থেকে গাড়িতে এসে নতুন বাস স্ট্যান্ড নামে। তার বাসা খেজুরতলা আবাসনে যা নতুন বাস স্ট্যান্ড থেকে কাছে হওয়ায় একা একা বাসার দিকে রওনা হচ্ছিল। রাস্তায় কয়েকজন লোক তার পিছু নেয় এবং তাদের আচরণ সন্দেহজনক ছিল। ভয়ে সে গলির ভেতর দিয়ে পালিয়ে আসে। আমি দ্রুত বিষয়টি বুঝতে পারলাম। আমি আমার দলকে নির্দেশ দিলাম আশপাশে তল্লাশি চালাতে। কিছুক্ষণ পর, আমার একজন পুলিশ সদস্য জানাল, কয়েকজন সন্দেহভাজন যুবককে অন্য একটি গলির মাথায় ঘোরাঘুরি করছে।
**তদন্ত ও নিরাপত্তা**
আমি আমার দল নিয়ে সেই জায়গায় গিয়ে যুবকদের আটক করলাম। তাদের মধ্যে দুজন নেশাগ্রস্ত ছিল। তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের অস্ত্র না পাওয়া গেলেও মেয়েটির দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী তাদের আচরণ সন্দেহজনক ছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা মেয়েটির পিছু নিয়েছিল। এরপর আমি ফিরে এসে মেয়েটিকে সান্ত্বনা দিলাম। “আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এখন আপনি নিরাপদ। আমরা আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেব।” মেয়েটি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
**বাড়ি পৌঁছে দেয়া**
পুলিশ পিকআপে মেয়েটিকে তুলে তার ঠিকানা অনুযায়ী রওনা দেই। রাস্তায় আমি মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, সে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে। সে একজন ডিভোর্সি। সে তার মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে, মাকে দেখতে বাড়িতে এসেছে। আজকের ঘটনাটি তার জন্য একটি দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। মেয়েটি তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বলেন, “আজ যদি আপনারা না থাকতেন, আমি কী করতাম জানি না। আমি হাসিমুখে জবাব দিলাম, “আমরা আপনাদের সেবার জন্যই আছি। যেকোনো বিপদে ৯৯৯-এ কল করবেন। আমরা অবশ্যই সাহায্য করব।”
*শেষকথা*
মেয়েটিকে তার বাড়িতে নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে আমি ও আমার দল আবার টহলের দায়িত্বে ফিরে যাই। সেই রাতে আমাদের কাজ শুধু একটি মেয়েকে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া ছিল না, বরং আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি যে, পুলিশ শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা নয়, বরং মানুষের সুরক্ষার জন্য নিবেদিত একটি প্রতিষ্ঠান। আকাশে তখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। পুলিশের নির্ঘুম রাতের টহল আবার শুরু হলো, আর সেই সঙ্গে আমাদের নীরব দায়িত্বপালনও।
ধন্যবাদ সকলকে।
*সমাপ্ত*