**গল্প:**
**ভ্রুণের আত্মকাহিনী”**
মাতৃগর্ভে এক ভ্রুণ ছিল। সে জানত না পৃথিবী কেমন, জানত না মানুষের হাসি বা কান্না কেমন হয়, না জানত আকাশে মেঘ ওঠে, না জানত পৃথিবীতে রোশনি আসে সূর্যের আলো থেকে। তার পৃথিবী ছিল তার মায়ের পেটের অন্ধকার কোণ, যেখানে সে ছিল ছোট্ট একটি জীব, কিন্তু তার ভিতরে হাজারো স্বপ্ন সঞ্চিত।
একদিন, সে অনুভব করতে শুরু করল কিছু অস্বস্তি, এক ধরনের চাপ তার ওপর পড়তে শুরু করল। সে প্রথমবার বুঝতে পারল যে কিছু ভুল হচ্ছে, তার আশপাশের পরিবেশ পরিবর্তিত হচ্ছে। গর্ভের দেয়ালগুলো যেন তার ওপর চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিছু দিন আগে তার মা তাকে খুব ভালোবাসতেন, তাকে সুরক্ষা দিতেন। কিন্তু এখন মা যেন কিছুটা বিভ্রান্ত, কিছুটা অসুস্থ। তার মনেও কিছু অস্বস্তি ছিল, কিছু প্রশ্ন ছিল, কিন্তু সে বুঝতে পারছিল না কী ঘটছে।
“মা, কেন তুমি আমাকে এভাবে অস্বস্তি দিচ্ছো? কেন তুমি আমাকে অনুভব করছো না?” ভ্রুণটি ভাবছিল। “আমি কি তোমার কাছে অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেছি?”
একটি দিন, ভ্রুণটি অনুভব করল যে তার মা হাসপাতালে যাচ্ছেন, তার মুখে অদ্ভুত রকমের বিষন্নতা ছিল। হাসপাতালের কক্ষের ভেতরে ঢোকার সময় মা তার হাত শক্ত করে ধরেছিলেন, কিন্তু সেখানে কোনো আশা ছিল না, শুধুই উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা। ভ্রুণটি জানত, সে তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের মধ্যে ছিল।
এবার সে অনুভব করতে পারল যে, তার অস্তিত্বের উপর বড় ধরনের প্রশ্নচিহ্ন উঠেছে। সে শুনতে পেল তার মা আর বাবা কথা বলছেন। “এটা আমাদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। আমরা এখন প্রস্তুত নই, আমাদের একসাথে থাকতে হবে, কিন্তু এই মুহূর্তে একটি নতুন জীবন আমাদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা হতে পারে।”
এ কথাগুলো শুনে ভ্রুণটি আরো বেশি শূন্য অনুভব করল। “তাহলে কি আমি এই পৃথিবীতে আসব না? আমি কি কখনো তাদের কোলে বসে পৃথিবী দেখব না? আমি কি কোনো দিন তাদের হাসির মধ্যে মিশে যেতে পারব না?”
গর্ভের ভিতর হালকা আলো দেখা দিল। ভ্রুণটি অনুভব করল, তার সময় শেষ হয়ে আসছে। সে জানত না কেন, কিন্তু তার জীবনের এই ক্ষুদ্র সময়টি হয়তো খুব শীঘ্রই শেষ হতে যাচ্ছে। তার সমস্ত আশা, সমস্ত স্বপ্ন, সব কিছু যেন একটি স্লেটের মতো মুছে যাওয়ার পথে।
অবশেষে, সে বুঝতে পারল যে পৃথিবীতে তার পদার্পণ আর হবে না। তার ছোট্ট হৃদয়, তার কোমল অস্তিত্ব, সব কিছুই হারিয়ে যাবে। কিন্তু সে যেন নিজেই প্রতিজ্ঞা করল, “যদিও আমি পৃথিবীতে আসতে পারলাম না, আমি অন্তত সৃষ্টির নীরব কণ্ঠে জীবনের গল্প শুনতে থাকব।”
এভাবেই এক ভ্রুণের জীবন, তার আশা, তার কষ্ট, তার পৃথিবীতে না আসার গল্প শেষ হল, কিন্তু তার অস্তিত্ব, তার আত্মা যেন এক অদৃশ্য গাথা হয়ে রইল।
লেখক
এসআই মোঃ সোহেল রানা
বাংলাদেশ পুলিশ