**বটবৃক্ষ ও বিষখালী নদীর প্রেমলীলা**
বরগুনার বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের রামনা টু ফুলঝুড়ি খেয়াঘাটের পাশে অনন্ত যৌবনা বিষখালী নদীর শরীর ঘেঁষে শিকড় ও ডালপালায় এক বিশাল বটবৃক্ষ দাঁড়িয়ে আছে যুগ যুগ ধরে। বারবার সে বিলীন হতে গিয়েও বিলীন হয়নি। জিজ্ঞেস করলাম কেন? বৃক্ষরাজ বটবৃক্ষ উত্তরে বলল প্রেমময় নদীর টানে। তার প্রশস্ত ডালপালা আকাশ ছুঁয়েছে, শিকড়েরা মাটির গভীরে প্রবেশ করেছে, আর ছায়া দিয়ে সে আশ্রয় দিচ্ছে পথিকদের। কিন্তু তার মনে আছে এক অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা—পাশের অনন্ত যৌবনা বিষ খালি নদীটির প্রেম পাওয়ার। নদীটি চঞ্চল, কেমন যেন অদ্ভুত মায়াবী! সে সারাদিন কলকল করে বয়ে যায়, কখনো রোদে ঝলমল করে, কখনো জোয়ারে দুলে উঠে। কিন্তু বটবৃক্ষের দিকে সে কখনো তাকায় না, যেন তার অস্তিত্বের কোনো মানেই নেই। একদিন বটবৃক্ষ সাহস করে বলল, **“নদী, তুমি এত সুন্দর, এত প্রাণবন্ত! আমি তো শুধু তোমায় দেখেই দিন কাটাই। তুমি কি একটুও আমাকে ভালোবাস না?”** নদী মৃদু হাসল। **“আমি তো বহমান, আমি কোনো কিছুর জন্য থামতে পারি না, বৃক্ষরাজ! কিন্তু তোমার ছায়ায় আমি বিশ্রাম পাই, তোমার গা বেয়ে ঝরে পড়া পাতাগুলো যখন আমার বুকে ভাসে, তখন মনে হয়—তুমিই আমার একমাত্র আপন।”** এই কথায় বটবৃক্ষের হৃদয় পূর্ণ হয়ে গেল প্রেমে। সে নদীর কাছে আরও ঝুঁকে পড়ল, তার শিকড় নদীর জলে ছড়িয়ে দিল, যেন একটু ছুঁতে পারে তার প্রেমিকাকে। সময়ের সাথে সাথে তারা আরও কাছাকাছি আসে। বর্ষাকালে নদী উচ্ছ্বাসে ভেসে এসে বটের গুঁড়িতে মাথা রাখে, আর বটবৃক্ষ তার শিকড়ে নদীকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে। তাদের এই প্রেমের মিলন দেখে পাখিরা গান গায়, চাঁদ আলো বিলিয়ে দেয়, বাতাস ভালোবাসার সুর বয়ে আনে। কিন্তু নদীর তো গন্তব্য আছে, তাকে তো একদিন সাগরে মিশে যেতে হবে। বিদায়ের দিন নদী বিষণ্ণ মনে বলে, **“আমি তো চলে যাচ্ছি, তুমি কি আমাকে ভুলে যাবে, প্রিয়?”** বটবৃক্ষ হেসে বলল, **“ভুলব না কখনো! তোমার প্রতিটি ছোঁয়া আমার শিকড়ে রয়ে গেছে। তুমি চলে গেলেও তোমার স্মৃতি আমার মধ্যে বেঁচে থাকবে, চিরকাল।”** নদী অশ্রুভেজা হাসি নিয়ে বিদায় নেয়, কিন্তু তার প্রতিটি ঢেউয়ে বয়ে চলে বটবৃক্ষের ভালোবাসা। আর বটবৃক্ষ? সে অপেক্ষা করে রইল, পরের বর্ষায় নদী ফিরে আসবে বলে…
(লেখক:-
মোঃ সোহেল রানা।)
**- সমাপ্ত -**