**আমাদের মানসিকতার অধঃপতন: সহমর্মিতার জায়গায় উদাসীনতা**
একটা সময় ছিল, যখন কোনো অন্যায় বা অশান্তি দেখলেই মানুষ ছুটে যেত তা থামানোর জন্য। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আমাদের সমাজে এক নতুন প্রবণতা দেখা দিয়েছে—সহমর্মিতার বদলে উদাসীনতা। এখন কেউ মারামারি করলে আমরা থামানোর চেষ্টা করি না; বরং মোবাইল বের করে ভিডিও করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এটাই যেন আমাদের বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন আমরা এমনটা করি? কেন আমরা মানবতার জায়গায় দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়ানোর বদলে দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হই?
#### **উদাসীনতার কারণগুলো**
১. **সংস্কৃতির পরিবর্তন:** একসময় অন্যের কষ্টে ব্যথিত হওয়া এবং সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসা সামাজিক দায়িত্ব বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু এখন আমরা ‘নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত’—এই ভাবনার মধ্যে বন্দি হয়ে গেছি।
2. **স্মার্টফোন ও সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব:** আমরা এখন অনেকটাই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বসবাস করি। বাস্তব জীবনের সংকট বা সহিংসতার চেয়ে আমাদের কাছে ‘ভাইরাল কন্টেন্ট’ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মানুষ সাহায্যের বদলে ঘটনাটি ক্যামেরায় বন্দি করতে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়ছে, যেন সেটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট পাওয়া যায়।
3. **আইনি জটিলতার ভয়:** অনেকেই মনে করেন, কোনো ঝামেলায় জড়ালে পুলিশি ঝামেলা বা আইনি বিপত্তি হতে পারে। এই ভয়ে অনেকে চুপ করে থাকেন এবং কেবল দর্শকের ভূমিকা পালন করেন।
4. **সহানুভূতির অভাব:** সমাজ যত বেশি প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে, মানুষ ততটাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। অন্যের কষ্টে ব্যথিত হওয়ার ক্ষমতা ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে।
#### **সম্ভাব্য সমাধান**
এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে।
– **মানবিকতা চর্চা করা:** ছোটবেলা থেকে শিক্ষা দিতে হবে যে, বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই প্রকৃত মনুষ্যত্ব।
– **সচেতনতা বৃদ্ধি:** বিভিন্ন সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে মানুষ সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং সাহায্যের হাত বাড়ায়।
– **আইনগত সুরক্ষা:** যারা অন্যায় থামাতে এগিয়ে আসেন, তাদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা ভয় না পান। আমরা যদি এই মানসিকতার পরিবর্তন না করি, তাহলে একসময় মানবতা পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে। আমাদের সমাজকে আবারও সেই জায়গায় ফিরিয়ে নিতে হবে, যেখানে একজন বিপদে পড়লে দশজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে। মানবিকতা হারিয়ে গেলে আমরা কেবল একদল নিঃসংবেদনশীল মানুষে পরিণত হবো, যাদের কাছে কেবল বিনোদনই বড়, আর মানুষের কষ্ট গুরুত্বহীন।
এখন সময় এসেছে সচেতন হওয়ার, দায়িত্ব নেওয়ার। মানবতার জন্য, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।
(মোঃ সোহেল রানা)
(সমাপ্তি)